সফল লাইন-চীফ হতে চাইলে আপনি কি করবেন!
গার্মেন্টস সেক্টরে একজন লাইন-চীফ হলেন একটি লাইনের অভিবাভক বা গার্ডিয়ান, একজন সফল লাইন-চীফ হতে হলে তাকে কিছু নিনজা টেকনিক অবলম্বন করতে হয়।একজন সফল লাইন-চীফ শুধু প্রোডাকশ নিয়েই ভাবেন না তাকে তার পাশাপাশি কোয়ালিটি, কিউ.এম.এস, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যাপার নিয়েও ভাবতে হয়।আজকে আমি একজন সফল লাইন-চীফ হতে কি কি করা দরকার অথবা তার সম্ভাব্য দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো কি হওয়া দরকার সেই বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
একজন সফল লাইন-চীফ এর কোর বা মূল দায়িত্বগুলো হলঃ
1) প্রতিদিনের মোট কর্মীর উপস্থিতি চেক করা।
2) লাইনে মেশিন লে-আউট করা এবং মেশিন ও দক্ষতা অনুযায়ী অপারেটর সেট করা।
3) কাজের এবং তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মীকে বিভিন্ন লাইনে বিতরণ ও বরাদ্দ দেওয়া।
4) কার্যদিবসের প্রথম মিনিটেই যেন সকল মেশিনে এবং অন্যান্য পজিশনে কাজ শুরু হয় তা নিশ্চিত করা।
5) অপারেটর/হেলপারদের সময়মত উপস্থিতি, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মস্থল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা বোধ ইত্যাদি বিষয়ে অনুপ্রানিত করা।
6) শূণ্যপদে অপারেটর/হেলপার নিয়োগের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ-কে অবহিত করা বা কোটার ভিত্তিতে লাইনের শূন্যতা/প্রয়োজনীয়তা অনুসারে নতুন অপারেটরকে নিয়োগ ও বরাদ্দ করার তালিকা প্রস্তুত করে প্রডাকশন ম্যানেজারকে অবহিত করা।
7) সুপারভাইজারের প্রতি ঘন্টার প্রোডাকশন রিপোর্ট চেক করা এবং কোন গ্যাপ থাকলে সে অনুযায়ী পরামর্শ প্রদান করা।
8) লাইনের ভারসাম্য বজায় রেখে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে রাখতে সুপারভাইজারকে সহায়তা করা।
9) প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে শ্রমিকের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও তা নিশ্চিত করা।
10) কর্মীদের ফেসিলিটি এবং বেনিফিটগুলি ফ্লো-আপ করা।
11) অধস্তনকে তদারকি করা এবং আরও ভাল উপায়ে তাদের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া।
12) অলটার পণ্য উৎপাদন না করার বিষয়ে কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।
13) অধিক উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া বা উৎপাদন বাড়ানো এবং তদনুসারে পরিকল্পনা করা।
14) প্রোডাকশনের টার্গেটের উপর ভিত্তি করে ম্যানেজারকে প্রতি ঘন্টায় প্রডাশন রিপোর্ট প্রদান এবং জমা দেওয়া।
15) পণ্যগুলির সর্বোত্তম গুণমানটি নিশ্চিত করা এবং অল্টার বন্ধ করা এবং কাউন্টার স্যাম্পল অনুযায়ী সুইংয়ের মান ঠিক রেখে সমস্যার সমাধান করা।
16) ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পোষাক তৈরী হচ্ছে কি না তদারকি করা।
17) প্রতি ঘণ্টায় সুপারভাইজারের কাজ তদারকি করা।
18) দৈনন্দিন কাজের টার্গেট পূরণ করা।
19) উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অন্যান্য আদেশ যথাযথভাবে পালন করা।
20) অপারেটরকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া, সে অনুযায়ী মান সম্মত পন্য উৎপাদন নিশ্চিত করন। উৎপাদন কম হলে বা মান সম্মত না হলে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।
21) প্রতি ঘন্টার উৎপাদন কাজের অগ্রগতি তদারকি করা।
22) ফ্লোরের উৎপাদন সম্পর্কিত প্রযোজ্য/কোম্পানীর নির্ধারিত সকল প্রকার রিপোর্ট/রেকর্ড প্রস্তুত ও সংরক্ষন নিশ্চিত করা।
23) কোম্পানীর নির্দেশিত সকল বিধি বিধান ও নিয়ম শৃঙ্খলা যথাযথ ভাবে মেনে চলা।
24) কোম্পানীর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে কোন যুক্তিসংগত আদেশ নির্দেশ মেনে কাজ করা।
25) প্রতিদিনের DHU রিপোর্ট ফলো করা এবং টপ থ্রি ডিফেক্টের প্রতি বিশেষ টেক-কেয়ার করা।
26) উৎপাদন অব্যশই কিউ.সি পাশ হতে হবে সেটি নিশ্চিত করা।
27) উৎপাদিত পণ্য অব্যশই প্রতিদিন ওয়াশে পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।
28) অধঃনস্তদের প্রতি কোনরূপ অসদাচরণ করা যাবে না।
29) দেরীতে হাজির হওয়া কর্মীদের নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।দুপুরে খাবার সময় নজরদারী রাখুন যাতে সবাই সময়মত খেতে যায় এবং সময়মত ফিরে আসে।
30) আজকের সমস্যা ও বটল-নেক সমূহ শনাক্ত ও লিপিবদ্ধ করতে হবে।আগামীকালের সমস্যাসমূহ অনুমান করে পরবর্তী করণীয় কি ঠিক করতে হবে।
31) কর্মীদের একটি তালিকা নিজের কাছে রাখুন ঐ তালিকার কে কি কাজ পারে তার হিসাব রাখুন।
32) পরবর্তী দিনের অনুপস্থিতি ও আগামী দিনের অনুপস্থিতির হার কেমন হতে পারে তা ভেবে রাখুন, আজ অনুপস্থিত কর্মীদের খোঁজ খবর নিন অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করুন যাতে আগামী দিন যেন অনুপস্থিতি কম থাকে।
33) কর্মীদের মঙ্গল; কর্মীদের মঙ্গল সাধনের ক্ষেত্রে লাইন চীফ এবং সুপারভাইজারদের বিরাট দায়িত্ব আছে।আপনার কর্মীদের সবসময় সহয়তা, পরামর্শ দেওয়া ও তাদের কল্যাণের চেষ্টা করতে হবে। তাদের প্রতি আপনার সহয়তা,মঙ্গল কামনা ও একাত্নবোধ আপনার প্রতি তাদের স্ম্মান, আনুগত্য ও আস্থা নিয়ে আসবে।
34) স্যাম্পল তৈরী; উৎপাদনে যাওয়ার পূর্বে প্রাক-উৎপাদন স্যাম্পল তৈরী করুন। প্রাক-উৎপাদন স্যাম্পল তৈরীর পরে এটিকে ভালোভাবে চেক করুন,এতে কোন ত্রুটি আছে কিনা দেখুন, অনুমোদিত স্যাম্পলের সাথে মিলিয়ে দেখুন এতে নানা ধরণের সমস্যা নজরে আসতে পারে ফলে সংশোধনের সুযোগ থাকবে।
35) শার্প টুলস পলিসি এবং লেবেল ম্যানেজমেন্ট পলিসি অব্যশই মেনে চলতে হবে।
কিউ.এম.এস (QMS) বিষয়ক কিছু দায়িত্বঃ
১) কোম্পানীর পলিসি, কোয়ালিটি পলিসি ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে হবে।
২) কিউ.এম.এস (QMS) এর উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখতে হবে।
৩) কোম্পানীকে ভাল পরামর্শ প্রদান করে কোম্পানীর সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
পরিবেশ বিষয়ক কিছু দায়িত্বঃ
১) পরিবেশগত নীতিমালা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখা।
২) পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া এবং অপচয় রোধ করা।
৩) অযথা লাইট, ফ্যান এবং মেশিন চালু না রাখা।
৪) স্ব-স্ব কর্মস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলা।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু দায়িত্বঃ
১) ব্যক্তিগত সুরক্ষাকারী সরঞ্জাম (PPE) ব্যবহার করে অপারেটরদের কাজ করতে অনুপ্রাণতি করা।
২) অগ্নিনির্বাপণকারী সরঞ্জাম চেনা এবং তা ব্যবহার করা শেখা।
৩) কর্মস্থলের সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজ করা।
সময়ের অভাবে বা জানার অভাবে হয়ত অনেক কিছু বাদ পড়ে যেতে পারে কোন কিছ এ্যাড করতে চাইলে বাকিটুকু কমেন্ট সেগমেণ্টে।